Header Ads

Header ADS

গল্প, বেলা শেষে তুমি আমার

#বেলাশেষে_তুমিই_আমার

আদির ও অফিস থেকে ফিরবার সময় হলো।
আমি ভেতর ভেতর ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি।
যা মেজাজ গরম ওর।
এলোমেলো বাসা দেখলে আজ আমার রক্ষে নেই।
বকাবকি শুরু করবে,এটা এখানে কেনো!
ওটা ওখানে কেনো!
--সেই ভয়ে প্রতিদিন বিকেলে পুরো বাসাটা একবার আমাকে ঘুচাতে হয়।

তারপরও আদি আসলে একটা না একটা সমস্যা তৈরি হবেই।

কোমরে কাপড় গুঁজে বাসা ঝাড়ু দিচ্ছি।
আমার পিঠটা ব্যথা করছে। আদিকে কতবার বলেছি একটা কাজের মেয়ে রাখো।

ওর একটাই কথা কাজের মেয়ে রাখলে বাসাবাড়িতে অনেক সমস্যা।এর চেয়ে বরং তুমি নিজেই কাজ করো, সময়টাও ভালো কাটবে।

--বললাম,আদি শোন না তুমি আমায় একটা এন্ড্রয়েড ফোন কিনে দাও।
আমার ওখানে টুংটাং করে সময় কাটবে।
আদির সেখানেও না!

--আজকাল ঐ ফোন চালিয়েই তো ঘরের বউরা জগৎ চিনে।
পরে আর নিজের স্বামীরেই তোয়াক্কা করে না।

আদিকে এত ভয় পাই তর্ক আমি করতে পারিনা।যাই বলে হুম হুম করে যাই।
ওর কথা শুনে হুম বলি, তাতেও সমস্যা।
সেদিন বলল,হুম হুম করোনা আমার অফিসের রাহাত ভাইয়ের শালার বন্ধুর বউটা এই ফোন চালিয়ে চালিয়ে বন্ধু জুটিয়ে উনারে ছেড়ে পালাইছে।

মেয়ে মানুষ বিশ্বাস করতে নেই।

এসব ভাবতে ভাবতে .....
আদি দরজায় নক করলো তন্দ্রা ...তন্দ্রা ....তন্দ্রা
দরজাটা খোলো!

আমি কোমর থেকে গুঁজে নেয়া কাপড়টা খুলে ঘাম মুছে দরজা খুলতেই।

কি ব্যাপার দরজা খুলতে এতক্ষণ লাগে।
বাসায় করো টা কি সারাদিন!

না...মানে ...ঘর গুছাচ্ছিলাম।
তুমি আজ এত তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলে যে!
--কেনো তুমি চাও আমি দেরিতে বাসায় ফিরি।

ও কথা বলছিনা, তুমি তো সাধারনত এত আগে আগে বাসায় ফের না তাই বললাম!

--শরবত করে দেই এক গ্লাস!
ওটা জিজ্ঞেস করতে হয় এত গরম থেকে আসলাম শরবত তো দেবেই নাকি!

--আচ্ছা তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি।

আমি রান্না ঘরে গিয়ে ভয়ে ভয়ে শরবতটা বানিয়ে আনলাম।

আদি এক চুমুক দিয়েই ভ্রু কুঁচকালো,এটা শরবত নাকি লবনের পানি খেয়ে দেখো তুমি।

ওর দিকে তাকিয়ে এক ঢোক গিলতেই বমি এসে গেলো,আজব বকবেই বা না কেনো এটা কোন শরবত হলো।
কি বানালাম!

আমি আদির দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বললাম,
আচ্ছা আমি আবার বানিয়ে আনছি এগুলো ফেলে দেই!

--আদি চিৎকার দিয়ে বলল,অপচয় করাই তো তোমার কাজ ফেলবে না তো করবে কি!

--আমি আবার শরবতটা বানিয়ে আনলাম,আদিকে এগিয়ে দিতেই এখন আর খাবোনা ইচ্ছে করছেনা!

--আমি খুব যত্ন করে বানিয়েছি আদি প্লিজ খেয়ে দেখো না!

কথা কানে যায়না তোমার বললাম না খাবোনা তবুও কেনো জোর করছো!

আচ্ছা ঠিক আছে,খেতে হবেনা তোমায়।
আমি ওর ব্যাগ আর ব্লেজারটা নিয়ে আলমারিতে রাখতেই একটা নীল খাম নিচে পড়ে গেলো।

--ইচ্ছে হচ্ছিল খুলে পড়ি।
কিন্ত আদির পার্সোনাল জিনিস আমার স্পর্শ করা মানা।
তাই আগ্রহ থাকা স্বত্বেও খুলিনি।

--আদি রুমে আধ শোয়া হয়ে শুয়ে আছে।
--দেখে মনে হচ্ছে কোন সমস্যা?

--আদি একটা কথা বলি!
--হুম বলো.....!
--ভয় লাগছে কিছু মনে করবে না তো!

তোমার কি মনে হয় তন্দ্রা আমি সারাদিন শুধু মেজাজ দেখাই ভালোবাসা নেই আমার!

না মানে.....!
--তোমার কি কোন কারনে মন খারাপ আদি!

না,কেনো বলোতো!
তোমায় একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে!

না মন খারাপ নয়,মাথাটা ভীষণ ধরেছে।
একটু মালিশ করে দেবে!

অবাক একটু আগের আদি আর এখনকার আদির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য।
আমি ওর কপালে  হাত ছোঁয়াতেই ও বলল,আচ্ছা তন্দ্রা আমি কি খুব খারাপ!

--এমন কথা কেন বলছো!
এই যে সারাদিন তোমার সাথে এত চিল্লাচিল্লি করি তুমি মুখ বুঁজে সহ্য করো।
নিশ্চয়ই তোমার খারাপ লাগে!

--না লাগেনা আদি,তোমার এই চিৎকারই আমার শূন্য ঘরের চপলতা।

আদি আধ শোয়া থেকে ধপ করে উঠে বলল,তুমি এত সুন্দর করে কথা বলতে পারো।
আমি ব্যপারটা একদমই বুঝতে পারিনি কোন দিন।

--অত বুঝে কাজ নেই খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো আজ তোমার না মাথা ব্যথা!

তুমি কপালে হাত রাখলে অমনি মাথা ব্যথা চলে গেলো।

--দুষ্টুমি হচ্ছে কিন্তু আদি আমায় ছেড়ে দাও তরকারি গরম করবো খেতে আসো।

--আমি দৌড়ে যেতেই দেখলাম আমার শাড়ির আঁচলটা আদি নিজের করে রেখেছে।
প্লিজ আদি এখন খাওয়ার সময় ছেড়ে দাও আমার কাজ আছে।

--আচ্ছা যাও....।
শোন তন্দ্রা .....!
হুম ....বলো।

আমার ব্যাগ আর ব্লেজার কোথায় রেখেছো!
আলমারিতে তুলে রেখেছি।

--কিছু ধরোনি তো!
নাহ কি ধরবো,ইমপর্টেন্ট কিছু আছে নাকি!

--না না তেমন কিছুনা অফিসের কিছু কাগজপত্র।

--আদির প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই মনে কেমন যেন একটা কু ভাবনার উৎপত্তি হলো।
আদি আমার অজান্তে কিছু করছে না তো!

আমি রান্নাঘরে ঢুকে পড়লাম।
চুলা জালিয়ে তরকারি বসিয়ে ভাবছি আদির হঠাৎ আচরণের এই পরিবর্তন কেনো!

আমার অজান্তে কিছু হচ্ছে কি যা আমি জানিনা!

হঠাৎই আদির কণ্ঠ তন্দ্রা .....তন্দ্রা ......
কই গেলে তরকারি পোড়া গন্ধ আসছে তুমি কই!

--হায় আল্লাহ এই ভুল কেমন করে হলো!
এখন আদিকে কি দিয়ে রাতের খাবার দেবো !
চুলা বন্ধ করতেই আদি রান্নাঘরে।

--কি হলো তন্দ্রা,মন কোথায় ছিলো সব তরকারি পুড়ে যে যাই।
আমি মনে মনে বললাম, (কি জানি আমার সংসার পুড়ছে না তো) এমন কেনো মনে হচ্ছে!

কোন সমস্যা নেই তন্দ্রা ডাল রান্না আছে তো, দুটো ডিম ভেজে নাও আজকের এই হালকা খাবারে না হয় চালিয়ে দিবো!

আশ্চর্য এই আদিকে আজ অপরিচিত মনে হচ্ছে কেনো!
এত্ত গরম মানুষটা আজ শীতল কেন!
এমন ভাবতে ভাবতে ডিম নিতে ফ্রিজটা খুললাম।

পর্ব-1
#Sharmin_Rakhi_Chowdhury
চলবে

Blogger দ্বারা পরিচালিত.