Header Ads

Header ADS

কোরবানী কি এবং কেন?

দাদা জানতে চেয়েছেন কোরবানী কেন করা হয় এবং এর তাৎপর্য কি??
উওরঃ-
সময়ের সাথে সাথে মানুষের জানার আগ্রহটা বেড়ে চলে৷ তা হোক দুনিয়াবি বিষয়ে বা আখেরাতের৷ বিশ্বাসের কমতি না থাকলেও প্রশ্নের উঁকিঝুকি মনে এসে দোলা দেয়৷ মানার জন্য জানতে চাওয়াকে নিরুৎসাহিত নয় বরং উৎসাহিত করাই উচিত৷ তবে মানার ইচ্ছে না রেখে শুধু বিতর্ক করার জন্য প্রশ্ন করা নিরেট নীচু মনের পরিচায়ক৷
:
যাই হোক,মূল কথায় আসি
কোরবানি শব্দটি উর্দু এবং বাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আরবি পরিভাষায় কোরবানিকে নুসুক এবং ইংরেজিতে সেক্রিফাইস বলে। কোরবানি শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ করা, ত্যাগ করা, বিকিয়ে দেয়া। এই উৎসর্গ বা ত্যাগ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে হতে পারে। জান, মাল,স্বার্থ, ইচ্ছা-ইরাদা যেকোনো জিনিস কোরবানি বা উৎসর্গ করা যেতে পারে। তবে ইসলামি শরিয়তের ভাষায় কোরবানি ব্যাপকভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করা বুঝায়। ত্যাগ এবং তিতিক্ষা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং উচ্চমানসম্পন্ন ইবাদত। আর এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ত্যাগের বস্তু হচ্ছে- জীবন এবং তার পরই সম্পদের স্থান। কোরবানির গুরুত্ব এবং মহত্ত্ব তখনই সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করে যখন তা অত্যন্ত প্রাণপ্রিয় কোনো কিছুকে শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিঃস্বার্থভাবে উৎসর্গ করা হয়।
আল্লাহপাকের ধর্ম ইসলামি শরিয়ায় মুসলমান জাতির জীবনটাই একটি কোরবানিতুল্য। সূরা আল আনামের ১৬২ নম্বর আয়াতে মুসলিম জীবনের আদর্শকে উল্লেখ করে বলা হয়েছে ‘নিশ্চয় আমার নামাজ,আমার আত্মত্যাগ (কোরবানি), আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য’।
ইসলামে আল্লাহপাক মুসলমানদের মধ্যে তাদের মুসলমান নাম ধারণ এবং আল্লাহর প্রতি ইমানের পরীক্ষার জন্যই কোরবানির মতো একটি কাজকে ইবাদত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মুসলমান শব্দটির অর্থ যেহেতু আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী হিসেবে বোঝায়, তাই আল্লাহপাক মুসলমানদের তাদের ঈমানের পরীক্ষার জন্যই সূরা আনকাবুতের প্রথমেই বলেছেন ‘তাদের কি পরীক্ষা ছাড়া এমনিতেই ছেড়ে দেয়া হবে?’
সব মানুষেরই উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। কিন্তু প্রিয় বস্তুকে ত্যাগ না করতে পারলে তা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। সূরা আল ইমরানের ৯২ নম্বর আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে ‘তোমরা কখনোই পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের মমতার জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করো।’
ইসলামে কোরবানির সূচনাঃ আল্লাহপাকের খলিল হজরত ইব্রাহিম আঃ স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় ধৈর্যশীল পুত্র (হজরত ইসমাইল আঃ)-কে জবাই করছেন (সূরা সাফফাতের ১০২ নম্বর আয়াতে এ স্বপ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে)। হজরত ইব্রাহিম আঃ-এর এই স্বপ্ন প্রত্যক্ষভাবে আল্লাহর আদেশ না হলেও পরোক্ষভাবে এবং বাস্তবে তা ছিল আল্লাহপাকেরই হজরত ইব্রাহীম আঃ-এর প্রতি এক পরীক্ষামূলক নির্দেশ। সূরা আস্-সাফফাতের ১০৬ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এ ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা’।
অসীম ধৈর্যশীল পুত্র এবং আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পিত পিতা ইব্রাহিম আঃ আল্লাহ কর্তৃক প্রদর্শিত স্বপ্নের আদেশের প্রতি যখন সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করলেন এবং হজরত ইব্রাহিম পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়ে দিলেন তখনই মহান আল্লাহপাক তার মহা কুদরতি ক্ষমতা বলে ইব্রাহিম আঃ-এর উৎসর্গকে (কোরবানিকে) এক পশু কোরবানিতে রূপান্তরিত করে দিলেন। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে সূরা সাফ্ফাতের ১০৭-১০৮ নম্বর আয়াতদ্বয়ে এই রূপান্তরিত কোরবানিকে এইভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘আর আমরা একটি পশু জবাইয়ের বিনিময়ে তার পুত্রকে জবাই করা থেকে এক মহৎ কোরবানিতে পূর্ণ করলাম এবং এইভাবে পরবর্তী মানুষের জন্য পশু কোরবানির মাধ্যমে কোরবানির শিক্ষাকে প্রচলিত রাখলাম।’
কুরআনের এই আয়াতদ্বয় দ্বারা পশু কোরবানি মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব হয়ে রইল। (আরো বিস্তারিত সূরা হজে বর্ণিত আছে)। যেহেতু জীবন উৎসর্গ করে কোরবানি দেয়া অত্যন্ত দুরূহ কাজ, তাই আল্লাহ সোবহানতায়ালা পশু কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগের এই ইবাদতকে মানুষের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা আল-কাওসারেও আল্লাহপাক নবী করিম সাঃ-কে কোরবানির পরামর্শ দিয়েছেন।
যদি বলেন কোরবানি কেন?’ এর উত্তর দিতে গিয়ে তাই বলব, এই কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষের তাকওয়া, কর্তব্যপরায়ণতা, আনুগত্য এবং ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। সূরা হজের ৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক উল্লেখ করেছেন ‘এই পশু কোরবানির রক্ত এবং গোশত কিছুই আমার কাছে উপনীত হয় না, শুধু উপনীত হয় তোমাদের অন্তরের তাকওয়া,সদিচ্ছা এবং আমার আদেশের প্রতি তোমাদের আনুগত্য’।
কোরবানি কেন? এর উত্তরে আরো বলব, আত্মত্যাগ, স্বার্থ ত্যাগ, সম্পদ ত্যাগ এবং সর্বোপরি জীবন ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহর ধর্ম ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন আর এটাই কোরবানি। যারা এরূপ ত্যাগ স্বীকার করবে তাদের জন্য আল্লাহপাক সমগ্র কুরআনে বিভিন্ন আয়াতে জান্নাতের সব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বটে, তবে তার চেয়েও বড় পাওয়া হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। সূরা তওবার ৭২ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক বলে দিলেন ‘কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এটিই চরম সাফল্য’।
#
sheikh arfan

Blogger দ্বারা পরিচালিত.