ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদ আগামী ০৯ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর তৃতীয় বারের মত আয়োজন করতে যাচ্ছে "
"অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে,
নির্মল করো উজ্জ্বল করো , সুন্দর কর হে।।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদ আগামী ০৯ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর তৃতীয় বারের মত আয়োজন করতে যাচ্ছে "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদ নাট্যোৎসব"। চারদিনের এই নাট্যোৎসবে ১ম তিন সন্ধ্যায় তিনটি ভিন্ন ভিন্ন নাটক প্রদর্শিত হবে ও তিনদিনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। ১ম দিন মঞ্চস্থ দবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ন নাট্য সংসদ প্রযোজনা মনোজ মিত্র রচিত শুভ্রা গোস্বামী নির্দেশিত নাটক "কাক চরিত্র", ১০ তারিখ ২য় সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযোজনা সেলিম আল দীন রচিত ও আহসান হাবীব নির্দেশিত নাটক 'কীর্তনখোলা', ৩য় সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হবে ভারতের আনন্দন থিয়েটারের প্রযোজিত, মধুসুদন মূখপাধ্যায় রচিত সঞ্জীব সরকার নির্দেশিত নাটক 'টেলিস্কোপ'।
এই উৎসবের উদ্বোধনী সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর এম পি। উৎসব উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড. মোঃ আক্তারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিরাজগঞ্জ ১ আসনের সাবেক সাংসদ জনাব তানভীর শাকিল জয়, ড. ঈশরাফিল শাহীন, অধ্যাপক, থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা জনাব ইসমাইল হোসেন সুমন।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার ঠিক তেমনি বাঙালির মুক্ত বুদ্ধির চর্চায় সবচেয়ে বড় অবদান আমাদের এই বিদ্যাপীঠের। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ভাষার দাবী যেমন ত্বরান্বিত করেছিল মুনীর চৌধুরীর কারাগারে বসে প্রদীপের আলোয় মঞ্চস্থ হওয়া কবর তেমন মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার চরমপত্র আমাদের বীরদের বিনোদনের সাথে সাথে উদ্বুদ্ধও করেছিল। নাটকের চর্চা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ড্রামা সার্কল শুরু করেছিল তখন বলা চলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী পুরুষ একসাথে হাঁটা পর্যন্ত প্রায় নিষিদ্ধ ছিল। তবুও তার সদস্যদের পরবর্তীতে আলোকিত করেছে এদেশের মঞ্চ, টিভি, চলচ্চিত্র। ড্রামা সার্কল বন্ধ হয়ে গেলে পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক হয়ে পড়ে মূলত ডাকসু কেন্দ্রীক। দীর্ঘদিন ডাকসু বন্ধ থাকায় ও একমাত্র প্ল্যাটফর্ম ড্রামা সার্কল না থাকার কারণে নাট্যচর্চার প্রতিকূলতার বৈতরণী তৈরী হয়েছে তা আমরা আজও পেরুতে পারি নি। একাডেমিক নাট্য শিক্ষা চালু থাকলেও উপযুক্ত প্ল্যাটফর্মের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এ ক্ষেত্রে তাদের প্রতিভার উন্মেষ ঘটাতে পারছে না। তৈরী হচ্ছে মনোবৈকল্য এবং অপসংস্কৃতির চর্চা। বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি কেন্দ্রিক কিছু নাটকের দল তাদের কার্যক্রম চালালেও তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করছে কিনা বা সুযোগ পাচ্ছে কিনা তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এও সত্য ৬৪ কলার সমন্বয়ে গঠিত এই কলার শিক্ষা এবং তাত্বিক প্রয়োগের জন্য '৮০ এর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন প্ল্যাটফর্ম গড়ে ওঠেনি, এমনকি উদ্যোগও নেয়া হয় নি। অবহেলিত হয়ে রয়েছে এর চর্চা। এই দীর্ঘবিরতির পর আমরা একদল তরুণ নাট্যপ্রেমী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ঐকান্তিক চেষ্টায় গড়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদ। "মঞ্চ হোক মুক্তির পথ" এই স্লোগানে গঠিত সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য নাট্য চর্চার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্য চর্চার ক্ষেত্রে যে বন্ধ্যাত্ব তৈরী হয়েছে তা দূর করা তেমনি শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে এসে অবাধ বিচরণের সুযোগ করে দেয়া এবং মুক্ত চিন্তা বিকশিত করা ও শিল্পের মাধ্যম হিসেবে নাটককে সকলের নিকট পৌঁছে দেয়ার পথ তৈরী করা।